সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১১

খাদ্য ঘাটতি ও সমাধান : শ্রীশ্রীঠাকুরের দর্শন

প্রত্যেক মানুষের দৈনন্দিন জীবনে খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান এ তিনটি মৌলিক চাহিদা। কিন্তু আজ দেশ এ তিনটি মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। যদিও দেশের সরকার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে তাল মিলিয়ে অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদনের যথেষ্ট চেষ্টা করছে কিন্তু তবুও দেশে প্রায়ই খাদ্য ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষভাবে বলতে গেলে প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় তা তীব্র আকার ধারণ করে। এই একবিংশ শতাব্দিতে এসেও দেখা যাচ্ছে আমরা সহ পৃথিবীর অনেক দেশেই দু:শ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে কৃষক আত্মহত্যা করছে কিংবা অনাহারে মারা যাচ্ছে।

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেছেন, যদি বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সম্পদ বাস্তবভাবে প্রয়োগ করা যায়, তাহলে অনেক চাহিদা ও দূ:খ-দূর্দশা থেকে অনেকখানি মুক্তি পাওয়া যাবে। (আলোচনা প্রসঙ্গে, ৪র্থ খন্ড, ৭/৯/১৯৪২)

তিনি আরো বলেছেন, “আমাদের শুধু জানা প্রয়োজন ভূমি তথা মৃত্তিকা সম্বন্ধে এবং কিভাবে এগুলোর ব্যবহার করতে হয়। ” বিশেষত; এক-এক ধরণের মাটিতে এক-এক ধরণের শস্য ভাল জন্মে এবং কোন জমির মাটির রাসায়নিক উপাদান ও শস্যের নির্বাচন ভাল ফল নিয়ে আসতে পারে। এমনকি, যদি সব জায়গায় মৃত্তিকা পরীক্ষণের পরীক্ষাগার না থাকে, তবে আমাদেরই মৃত্তিকা পরীক্ষণের কিছু ফর্মূলা জানতে হবে।

আমাদের কিছু সহজ বিষয় অবশ্যই জানতে হবে, যেমন: কোন ধরনের সার ব্যবহার করতে হবে, ভিন্ন-ভিন্ন শস্যের লাগানোর ও ফসল তোলার সময়,বীজ বাছাইকরণ ও সংরক্ষণ ইত্যাদি। (আলোচনা প্রসঙ্গে, ৩য় খন্ড, ১৫/৪/১৯৪২)

শ্রীশ্রীঠাকুর কোন জমিই যেন অপ্রয়োজনে অনাবাদী হিসেবে ফেলে রাখা না হয় তার উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। যেখানেই এক টুকরা জমি পড়ে থাকুক না কেন ইচ্ছা করলে আমরা সেই জায়গায় কলা কিংবা রেডিশ কিংবা কঁচু চাষ করতে পারি। এতে আমাদের পরিবারের সামান্য হলেও উপকার হবে। যদি এতে সামান্য পরিমানে লাভও হয়, তাহলেও বেশী লাভ হয় না এ অজুহাতে কোন সুযোগই হাতছাড়া করা যাবে না।
(আলোচনা প্রসঙ্গে, ৭ম খন্ড, ২২/২/১৯৪৬)

শ্রীশ্রীঠাকুর প্রতিটি গৃহস্থালী সম্পর্কিত কর্মকান্ডের সাথে কৃষিকে যুক্ত রাখায় উপর জোর দিয়েছেন। ঘরের মহিলা ও ছোটদেরও কৃষিজ উৎপাদনে যুক্ত হওয়া উচিত। এতে তাদের শরীরও ভাল থাকবে, দক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে। তিনি কৃষিকে সব কিছুর সাথে যুক্ত করার কথা প্রায়ই বলতেন। তিনি বলতেন, কৃষিকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া না গেলে, আমরা শিল্পের জন্যও মজবুত ভিত গড়তেও পারবনা, কোন শিল্প মেধার সম্ভাবনাও থাকবে না। এ ধরনের পরিস্থিতি একটি দেশকে তার শিল্পোৎপাদনের জন্য পরনির্ভরশীলতার দিকে ধাবিত করে।
(আলোচনা প্রসঙ্গে, ৭ম খন্ড, ২১/৩/১৯৪৬)
তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, প্রতি-প্রত্যেকেরই নিজস্ব জমিতে অল্প হলেও আবাদ করা উচিত এবং এরপর পরীক্ষা করা উচিত যদি সে এরকম শস্য উৎপাদন করতে পারে, যেসব সাধারণত ঐ জায়গায় হয় না। (আলোচনা প্রসঙ্গে, ৩য় খন্ড, ১৫/৪/১৯৪২)

শ্রীশ্রীঠাকুর কৃষিকে উৎসাহিত করতে ছোট অঞ্চলে কৃষি প্রর্দশনী আয়োজনের কথা বলেছেন। তিনি বরেছেন, আমি ছোট অঞ্চলের কথা বলছি কারণ সেখানে প্রত্যেকে এক অন্যকে চেনে। যদি একটি গ্রামের কৃষক দেখে ও শুনে যে, অন্য গ্রামের এক কৃষক একটি শস্য উৎপাদন করেছে, তাহলে সেও আশান্বিত হয় এবং তার ভিতরে বিশ্বাস জন্মে চেষ্টা করলে সেও তা অর্জন করতে পারে। তিনি কৃষি ক্ষেত্রে বিশেষ অর্জনের জন্য পদক প্রদানের প্রচলন করার কতা বলেছেন, যাতে কৃষকেরা বিশেষ কিছু করতে উৎসাহী হয়।
তিনি সতর্কবানী উচ্চারণ করে বলেছেন সক্ষমতার মাপকাঠি যেন extraordinary production এর জন্য না হয়, কারণ তাতে সাধারণ মানুষ তেমন উপকার পাবে না। বরংচ যেসব বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে তা হলো: ভাল উৎপাদন, কম বিনিয়োগ, স্বল্প সময় ও স্বল্প জমি। প্রদর্শনীর সাথে সেখানে খোলাখুলি সব বিষয়ে আলোচনার ব্যস্থা রাখতে হবে। সফল কৃষকেরা তাদেও অভিজ্ঞতা বর্ননা করবেন। যেমন: কিভাবে এবং কি করে তারা এত ভাল উৎপাদন করতে সমর্থ হলেন।


Writter: Rintu Kumar Chowdhury
IT specialist & freelance writer
Director, SHREYO ONNEYSHA (CENTER FOR RESEARCH ON SRISRITHAKUR ANUKUL CHANDRA)

1 টি মন্তব্য: